What is Provision? And Its Necessity for Company Accounts.
প্রভিশন কি? প্রভিশন না রাখলে কি হবে?
প্রভিশন সংরক্ষণের সাথে ব্যবসায়ের লাভ ক্ষতির একটা সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবসায়ের আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। যে তারিখে হিসাব বিবরণী প্রস্তুত করা হয় সেদিন কিছু কিছু বিষয় অনিশ্চিত থেকে যায়। সেদিন এমন কিছু খরচ থাকতে পারে যা নিকট ভবিষ্যতে প্রদান করার প্রয়োজন হবে কিন্তু প্রদানের সময় বা পরিমাণ সম্পর্কে এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। যেমন 31 ডিসেম্বর 2024 সমাপ্য বছরের নীট লাভের একটা অংশ কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে প্রফিট বোনাস দেয়া হবে। তবে তা নীট লাভের 5% হবে নাকি 7% হবে তা পরবর্তীতে ঠিক করা হবে। এক্ষেত্রে প্রফিট বোনাসের প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। প্রভিশন সংরক্ষণের অর্থ হল যে খরচটা আগামীতে হবে তা এখনই খরচের খাতে দেখিয়ে এ বছর লাভের পরিমাণ কম(সঠিক) দেখানো যাতে ভবিষ্যতে খরচ যখন হবে তখন হঠাৎ যেন লাভের পরিমান কমে না যায়।
প্রভিশন হল আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের একটি কার্যক্রম যেখানে লাভের কিছু অংশ সরিয়ে রাখা হয় যেন ভবিষ্যতে অর্থ বা সম্পদ খরচ হবে এমন কোন দায় পরিশোধ করা যায়। ভবিষ্যতে যে অর্থ বা সম্পদ খরচ হবে তার সঠিক পরিমাণ অথবা সঠিক সময়কাল সম্পর্কে প্রতিষ্ঠান ধারণা করতে পারে না তবে খরচ যে হবে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠান মোটামোটি নিশ্চিত থাকে।
যেমন আয়করের জন্য প্রভিশন রাখা হয়। প্রতিষ্ঠান জানে কিছুদিন পর আয়কর দিতে হবে তবে ঠিক কি পরিমাণ দিতে হবে তা এখনই নিশ্চিত নয় যেহেতু করহার বা করের খাত পরিবর্তন হতে পারে। ব্যাংকগুলো ঋণ শ্রেণিকরণের উপর ভিত্তি করে প্রভিশন রাখে। প্রতিষ্ঠান জানে কিছু ঋণ আর আদায় করা সম্ভব হবে না তবে কি পরিমাণ ঋণ অনাদায়ী হবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না। যেহেতু ভবিষ্যতে ঋণ অনাদায়ী হলে ব্যাংক ক্ষতির মুখে পরবে তাই যে ঋণগুলো অনাদায়ী হবে তা এখনই ব্যয় হিসেবে দেখিয়ে এবছর লাভের পরিমাণ কম দেখানো হয় যেন ভবিষ্যতে একইসাথে লাভ অনেক কমে না যায়। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের ক্ষতিপূরণ মামলা চলছে। মামলায় প্রতিষ্ঠানের হারার সম্ভাবনা বেশি থাকায় এবছর জরিমানা খরচ হিসেবে দেখিয়ে প্রভিশন সংরক্ষণ করা হবে যেন ভবিষ্যতে ঐ গ্রাহককে পরিশোধের সময় ব্যবসায়ের লাভের পরিমাণ হঠাৎ করে অনেক কমে না যায়।
কোন খাতে এবছরের প্রভিশন গত বছরের প্রভিশন হতে বেশি হলে এবছরের খরচ বাড়বে(লাভ কমবে)। একইভাবে কোন খাতে এবছরের প্রভিশন গত বছরের প্রভিশন হতে কম হলে এবছরের খরচ কমবে বা লাভ বাড়বে। তাই প্রভিশনের পরিমাণ কম বেশি করে প্রতিষ্ঠানের লাভের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ(Profit Smoothing) করা সম্ভব। 1998 সালে আন্তর্জাতিক হিসাব মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইএএসবি প্রভিশনের জন্য হিসাব মান প্রকাশ করে যা বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্র 1999 সাল হতে অনুসরণ করে আসছে।
আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুযায়ী প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য 3টি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে। ১ম শর্তঃ অতীতের কোন ঘটনার জন্য বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের আইনগত বা আচরণগত কোন দায় রয়েছে। আচরণগত দায় বলতে এমন দায়কে বোঝাবে যা প্রতিষ্ঠান আইনত পালন করতে বাধ্য না তবে দীর্ঘ দিনের রীতি অনুযায়ী তা পালন করে আসছে, যেমন প্রফিট বোনাস প্রদান। ভবিষ্যতে কোন ঘটনা ঘটবে এমন কাজের জন্য প্রভিশন সংরক্ষণ করা যাবে না। যেমন কোন ক্রেতার নিকট বাকীতে পন্য বিক্রি করা হবে যা সে পরিশোধ করতে পারবে না; এক্ষেত্রে প্রভিশন সংরক্ষণ করা যাবে না। ২য় শর্তঃ মোটামোটি নিশ্চিত যে ঘটনাটিতে প্রতিষ্ঠানের কিছু খরচ হবে। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহক মামলা করলে সাথে সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করা যাবে না যতক্ষণ মোটামোটি নিশ্চিত হওয়া যাবে যে মামলাতে প্রতিষ্ঠান হারবে। ৩য় শর্তঃ কোন ঘটনাতে প্রতিষ্ঠানের কত খরচ হতে পারে তা সহজে অনুমান করা যায় এমন হতে হবে।
নীচের কয়েকটি ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই প্রভিশন সংরক্ষণ করা যাবে নাঃ
1. সামনের বছর প্রতিষ্ঠানের নীট ক্ষতি হবে এজন্য এবছর প্রভিশন সংরক্ষণ করা যাবে না। যেহেতু ঘটনাটি ভবিষ্যতে ঘটবে তাই ১ম শর্ত লংঘিত হয়েছে।
2. সামনের বছর কোন মেশিন মেরামত করা হবে এজন্য এবছর প্রভিশন সংরক্ষণ করা যাবে না। কারণ মেশিন মেরামত করতে প্রতিষ্ঠান আইনত বাধ্য না(১ম শর্ত)।
3. পরিবেশের ক্ষতি করার জন্য সরকার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কি পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগতে পারে এ ব্যাপারে সঠিক ধারণ না থাকায় প্রভিশন সংরক্ষণ করা যাবে না।
প্রভিশন সংরক্ষণ করা বলতে প্রতিষ্ঠানের নগদ টাকা সরিয়ে অন্য কোন একাউন্টে রাখাকে বোঝায় না। এখানে টাকা সরিয়ে রাখা হয় না তবে প্রভিশন হিসাব রাখা হয়। প্রভিশন রাখা হলে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বাড়ে এবং লাভ কমে; পরের বছর যখন প্রকৃতই খরচ হয় তখন ব্যয় না বাড়িয়ে প্রভিশন কমানো হয় যাতে লাভ না কমে।
প্রভিশন না রাখলে কি হবে?
প্রথমত প্রভিশন না রাখলে হিসাবের আন্তর্জাতিক মান লংঘিত হবে। ফলে অডিট রিপোর্ট কোয়ালিফাইড হতে পারে বা অডিট রিপোর্ট স্বাক্ষর করতে অডিটর অপারগতা প্রকাশ করতে পারে। তাছাড়া রেগুলেটর যেমন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত মান অনুযায়ী প্রভিশন না রাখলে জরিমানা করতে পারে, বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বা লাইসেন্স বাতিল করতে পারে। প্রভিশন না রাখলে পূর্বের বছরের খরচ পরের বছরে চলে যেতে পারে। এতে নিট প্রফিট হিসাব ভুল হবে এবং নিট প্রফিট পরবর্তী বিভিন্ন হিসাব যেমন এমপ্লয়ি বোনাস, ডিভিডেন্ড, ট্যাক্স ইত্যাদি সঠিক হবে না।
লেখক:
আনোয়ার পারভেজ, এসিসিএ