Bill of Lading
বিল অব লেডিং
বিল অব লেডিং(বিএল) একটি গুরুত্বপূর্ণ জাহাজী দলিল। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিএল এর ভূমিকা অপরিসীম। বিএল পণ্য প্রেরক কর্তৃক ইস্যুকৃত একটি ডকুমেন্ট জাহাজ কর্তৃক পণ্য গ্রহণের নিশ্চয়তা বিধান করে। বিএল এর ৩টি প্রধান ব্যবহার হলঃ
১. আমদানিকারক বিএল দেখে নিশ্চিত হয় যে মালামাল জাহাজে লোড করা হয়েছে। এটি এক প্রকার কার্গো রিসিট যা বীমা ও কমার্শিয়াল কাজে পমাণপত্র হিসেবে কাজ করে। জাহাজীকরণের সময় মালামাল অবিকৃত ছিল কিনা তা বিএল এর মাধ্যমে আমদানিকারক ও ব্যাংক জানতে পারে।
২. বিএল হল পণ্য পরিবহণের চুক্তি। বিএল মোতাবেক পণ্য নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌছানোর কথা।
৩. বিএল পণ্যের মালিকানাস্বত্তের নিশ্চয়তা বিধান করে। বিএল এ কনসাইনির নাম দেখে জানা যায় পণ্যের মালিক কে হবে।
.
বিল অব ল্যাডিং-এর ধরণ:
- স্ট্রেট বিল অব ল্যাডিং (Straight B/L): এটি একটি নির্দিষ্ট প্রাপককে (Consignee) উদ্দেশ্য করে ইস্যু করা হয় এবং হস্তান্তরযোগ্য নয়।
- অর্ডার বিল অব ল্যাডিং (Order B/L): এটি শিপারের নির্দেশ অনুযায়ী হস্তান্তরযোগ্য হতে পারে এবং সাধারণত ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন হয়।
- বেয়ারার বিল অব ল্যাডিং (Bearer B/L): যার কাছে এই দলিল থাকবে, সে-ই পণ্যের মালিকানা দাবি করতে পারবে।
- ক্লিন বিল অব ল্যাডিং (Clean B/L): যখন পণ্য পরিবহনে কোনো ক্ষতি বা ত্রুটির উল্লেখ নেই, তখন এটি ইস্যু করা হয়।
- ক্লজড বিল অব ল্যাডিং (Claused B/L) বা ডার্টি বি/এল: যদি পণ্য সংক্রান্ত কোনো ক্ষতির বা ত্রুটির উল্লেখ থাকে, তাহলে এটি ইস্যু করা হয়।
একটি বিএল এ সাধারণত এলসি’র শর্তাবলীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে পণ্য উত্তোলন বন্দর, পণ্য খালাস বন্দর, রপ্তানিকারক এবং ক্রেতার নাম, নোটিফাইং পার্টির নাম ও ঠিকানার উল্লেখ থাকবে।
১. নাম ঠিকানাঃ পণ্য প্রেরক ও প্রাপকের পূর্ণ নাম ঠিকানা থাকে।
২. বিএল নং ও পারচেজ নংঃ বিএল নং, পারচেজ অর্ডার নং ও বিশেষ রেফারেন্স নং থাকবে।
৩. বিশেষ নির্দেশনাঃ মাল বন্দরে পৌছালে কাকে জানাতে হবে এ ধরণের নির্দেশনা থাকতে পারে।
৪. তারিখঃ বিএল ইস্যুর তারিখ ও মাল জাহাজীকরণের তারিখ থাকবে।
৫. মালের বিবরণঃ পণ্যের সংখ্যা, আকার, আয়তন, ওজন ইত্যাদি থাকবে।
৬. প্যাকেজিংঃ পণ্য কার্টন, ড্রাম নাকি ট্রে বক্সে পরিবহণ করা হবে তার বর্ণনা থাকবে।
৭. ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যঃ পণ্য তেজস্ক্রিয় বা অন্য কোন ঝুঁকি থাকলে তা উল্লেখ থাকবে।
৮. লোডিং পোর্টঃ যে পোর্টে পণ্য লোড করা হয়েছে তার নাম থাকবে।
৯. ভেসেলঃ জাহাজের নাম ও শিপিং লাইন্স এর নাম থাকবে।
.
বিএল দেখে শিপমেন্ট তারিখ নির্ধারণঃ
বৈদেশিক বাণিজ্যে শিপমেন্ট এর তারিখ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিপমেন্টের তারিখ থেকে জানা যায় তা যথাসময়ে শিপমেন্ট করা হয়েছিল কিনা। শিপমেন্ট এর পর যথাসময়ে দলিলসমূহ ব্যাংকে উপস্থাপন করা হয়েছে কিনা তা জানা যাবে এ তারিখ থেকে। ডেফার্ড এলসির ম্যাচুরিটি নির্ধারণে শিপমেন্ট এর তারিখ এর ভূমিকা আছে।
- যদি বিএল এ বিএল ইস্যুর তারিখ থাকে কিন্তু মাল জাহাজীকরণের তারিখ না থাকে তবে, বিএল ইস্যুর তারিখই হবে শিপমেন্টের তারিখ।
- যদি বিএল এ বিএল ইস্যুর তারিখ ও মাল জাহাজীকরণের তারিখ উভয়ই থাকে তবে, যে শেষের তারিখই হবে শিপমেন্টের তারিখ।
ব্যাংক কেন চার্টার পার্টি বিল অব ল্যাডিং গ্রহণ করে না?
ব্যাংক চার্টার পার্টি বিল অব ল্যাডিং গ্রহণ করে না কথাঠি সঠিক নয়। কিছু কিছু ঝুঁকির কারণে ব্যাংক চার্টার পার্টি বিল অব ল্যাডিং গ্রহণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে। ব্যাংক নিম্নবর্ণিত কারণে চার্টার পার্টি বিল অব ল্যাডিংকে এলসির শর্ত হিসেবে স্থাপন করতে আমদানিকারককে নিরুৎসাহিত করে থাকে।
জাহাজে মাল পরিবহণ, লোডিং, আনলোডিং ইত্যাদি সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হবে মূল চার্টারার(রপ্তানিকারক) ও জাহাজ মালিকের চার্টার পার্টি চুক্তি অনুযায়ী। চার্টার পার্টি চুক্তিতে আমদানীকারক বা তার ব্যাংক কোন পক্ষ নয়। ফলে জাহাজ ভাড়া পরিশোধ না করা বা অনুরূপ কোন কারণে জাহাজ মালিক অতিরিক্ত ভাড়া দাবী করতে পারে এবং ভাড়া না পেলে জাহাজমালিক জাহাজের মালামাল নিজের দখলে নিয়ে নিতে পারে। চার্টার পার্টি চুক্তিতে উল্লেখ নাই এমন কোন বিষয়ে মতানৈক্য হলেও জাহাজ মালিক পণ্যে কিছু অংশ দাবী করতে পারে। ফলে আমদানিকারকের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
এমনকি জাহাজ মালিক বা তার দেশের সাথে আমদানিকারকের দেশের পক্ষ হতে কোন সমস্যা থাকলে মাল বন্দরে আনলোড না করে জাহাজ মালিক ফেরৎ নিয়ে যেতে পারে।
চার্টার পার্টি বিল অব ল্যাডিং নন নিগোশিয়েবল। অর্থাৎ এরূপ বিএল দিয়ে পণ্যের মালিকানা ৩য় কোন পক্ষকে হস্তান্তর করা যায় না। তাই আমদানিকারক অনেক ক্ষেত্রে অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে।
তবে UCP-600 Article 22 অনুযায়ী ব্যাংক কখনই চার্টার পার্টি চুক্তি পরীক্ষা করতে বাধ্য না যদিওবা এলসির শর্তে চার্টার পার্টি চুক্তির কথা উল্লেখ থাকে।
লেখক:
আনোয়ার পারভেজ, এফসিসিএ